যে কালীগঙ্গা নদীর বুক দিয়ে চলাচল করতো জাহাজ, স্টিমার, সেই নদীর বুকে এখন বালুচর। কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা দুরন্ত কিশোরদের খেলাধুলার দৃশ্য চোখে পড়ে। বিগত চার দশক আগেও প্রমত্তা এ নদীতে ছিলো বাহারি ধরনের মাছ। এসব মাছ জেলেরা শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কালীগঙ্গা মৃতপ্রায় হওয়ার সাথে সাথে কমেছে মাছ। হারিয়েছে জেলেদের জীবিকা। নদীতে বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়টাই থাকে পানিশূন্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মানিকগঞ্জের বুক চিড়ে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতীসহ মোট ১১টি নদী। জেলার মোট আয়তন ১ হাজার ৩৭৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২৪১ কিলোমিটার নদী এলাকা। কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৪২ মিটার। দৌলতপুরের চর কাটারি এলাকায় যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে কালীগঙ্গা ঘিওর উপজেলার আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দুর্গাপুর ও তরা এলাকায় ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে। এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলীগর চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সাথে মিশেছে। বর্তমানে এখান থেকে আরো খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাপ, শল্লা হয়ে আলী নগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশেছে।

তরা এলাকার ইসমাইল শেখ বলেন, আশির দশকের শুরুর দিকেও কালীগঙ্গা দিয়ে বড় বড় ফেরি-লঞ্চ চলতে দেখা গেছে। আজ কালিগঙ্গার বুকে পানির অস্তিত্ব নেই বলইে চলে। বৃহৎ এ নদীটির দুরবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার জেলে পরিবারেও চলছে দুর্দিন। নদীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা পেশা বদল করতে পারেননি তাদের জীবন কাটছে মানবেতর ভাবে।

জনি মিয়া বলেন, এক যুগ আগেও এ নদীর পানি দিয়ে গোসল করতাম, সেচ কাজে ব্যবহার করতাম। কালীগঙ্গা নদীর বিভিন্ন অংশ দখল আর ভরাট হয়ে গেছে। ফলে আগের মতো নদীতে পানি থাকে না।

পরিবেশবাদী সংগঠক বিমল রায় বলেন, কালিগঙ্গা নদীতে বেশ কয়েকটি বড় ব্রিজ নির্মাণের ফলে নদীর কিছু অংশ সংকুচিত হয়ে গেছে। এছাড়াও অবৈধ দখল এবং পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদী। কালীগঙ্গা নদী খনন কার্যক্রম বেগবান করে নদীল প্রশস্ততা বাড়ানো উচিত। নইলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদুস সাকলাইন বলেন, নদীতে পানি পানি কমে গেলে খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। ছোট ছোট উদ্ভিদ না থাকলে পোকামাকড় খাবার পাবেনা। পোকামাকড় না থাকলে ছোট মাছ খাবার পায় না। আবার ছোট মাছ না থাকলে বড় মাছ থাকবে না। নদীতে পানি না থাকায় এভাবে খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে যায়। নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রেখে এসব জলজ ও প্রাণীজ জীবন রক্ষা করা জরুরি।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাইন উদ্দিন বলেন, পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ এর আওতায় কালিগঙ্গা খনন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও কালিগঙ্গা নদী ভাঙ্গন রোধে ও স্বাভাবিক স্রোতধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি মেগা প্রকল্প আগামী একনেকে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

কলমকথা/ বিথী